আজ শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন বাবু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু।

সোমবার (১৬ মে) দুপুর ১টায় সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় স্কাইলার্ক রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। তবে পদত্যাগপত্রে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।

গত ১৩ মে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি। আরিফ মাসুদ বাবু এবারও চেয়ারম্যান পদ প্রত্যাশী ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরিফ মাসুদ বাবু বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম অ্যাডভোকেট সাজেদ আলী মিয়া সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ১৯৭০-এর নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত (এম.সি.এ) ছিলেন। আমার ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোবারক হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য এবং ১৯৮৬ স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের দুঃশাসনের আমলেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত সদস্য হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের দলের হাল ধরেন।

তিনি আরও বলেন, সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সভাপতি হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসনাত। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় সাবেক সংসদ সদস্য আরেক ভাই কায়সার হাসনাত মাঠে নেমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন। সে সময় আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের স্বীকার হয়ে গ্রেফতার হন তিনি। পরবর্তীতে যার পুরস্কার হিসাবে শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে কায়সার হাসনাতের হাতে নৌকা তুলে দেন। ফলশ্রুতিতে সোনারগাঁয়ের তিনবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বিএনপির রেজাউল করিমকে ৮৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চমকে দেন এবং সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

মাসুদ বাবু বলেন, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০১৪ সালে এসে জোটের কারণে কায়সার হাসনাতকে মনোনয়ন না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে এ আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরাও নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জোটকে স্বাগত জানালাম। পরবর্তীতে নেত্রী আমাদের মূল্যায়ন করে আমার আরেক ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোশারফ হোসেনকে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সফলভাবে দায়িত্ব পালনকালে গতবছর মারা যান। পরবর্তী উপ-নির্বাচনে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের পরিবারেই নৌকা প্রতীক দিবেন। কিন্তু সে সময় নৌকা আমাদের না দিয়ে একজন সিনিয়র নেতাকে দিলেন, আমরা মেনে নিয়ে ওনাকে সমর্থন দিয়ে চেয়ারম্যান বানিয়ে দিলাম। সর্বশেষ মোগরাপাড়া ইউনিয়ন, যা আমাদের ৭০ বছরের ইতিহাস। এ ইউনিয়ন আওয়ামী রাজনীতির পুন্যভূমি, যার ধারক-বাহক হলো আমাদের পরিবার। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ১০ বছর যাবত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করে আসছিলাম। স্বচ্ছ থেকে রাজনীতি করার বিনিময়ে আজ নৌকা থেকে বঞ্চিত হলাম।

‘যে পরিবারে তিন প্রজন্ম আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য হয়েছে, যা সারা বাংলাদেশে হাতেগোনা ১০টি পরিবারও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ সেই পরিবারটিকে সামান্য একটি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা থেকে বঞ্চিত হতে হলো। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে?

তিনি বলেন, আমার জন্য পরিবারের ৭০ বছরের সাফল্য অর্জন ম্লান হতে চলেছে। তাই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে সব ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্ববায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পদত্যাগপত্র হাতে পাননি বলে গণমাধ্যমকে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া।